প্রথমেই বলে নেই যে, আমরা সাধারণত ল্যাপারস্কোপি কখন করে থাকি- রোগী যদি কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষণসহ আমাদের কাছে আসেন যে, তার এক বা একাধিক ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ, সেক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই ল্যাপারস্কোপির সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। আবার, পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, মহিলাটির ডিম্বাণুজনিত কোনো সমস্যা ছিল এবং ওষুধের মাধ্যমে তার সেই সমস্যা দূর করা হয়েছে, পরিপক্ক ডিম্বাণুও তৈরী করা হয়েছে, তার স্বামীর সিমেন প্যারামিটারও ভালো, কিন্তু, এরপরও তাদের বাচ্চা হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে, তাদের এই বাচ্চা না হওয়ার পেছনে আর কী কারণ থাকতে পারে, তা নির্ণয় করার জন্যও ল্যাপারস্কোপি করা হয়ে থাকে; যেমন, ফ্যালোপিয়ান টিউবের অবস্থা ভালোভাবে জানার জন্য।
ফ্যালোপিয়ান টিউবের অবস্থা জানার পদ্ধতি
ফ্যালোপিয়ান টিউবের অবস্থা জানার জন্য ‘হিস্টেরোসালপিনগোগ্রাফি’ নামক একটি এক্স-রেও করা যেতে পারে। হিস্টেরোসালপিনগোগ্রাফির সুবিধা হচ্ছে এই যে, এটি তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য এবং এর খরচও কম। কিন্তু, এর বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেমন,এটি রোগীর জন্য যথেষ্ট কষ্টদায়ক। এই পদ্ধতিতে রোগী যথেষ্ট ব্যথা পান। এর মাধ্যমে দু’টি ফ্যালোপিয়ান টিউব খোলা আছে কী না, শুধুমাত্র তা জানা যায়; অন্যান্য খুঁটিনাটি তথ্য জানা যায় না। এই পদ্ধতিতে অনেক সময় ভুল তথ্য/ ভুল নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ, এমন হতে পারে যে, রিপোর্ট অনুযায়ী রোগীর দু’টি ফ্যালোপিয়ান টিউবই বন্ধ পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে সেগুলো বন্ধ নয়। এজন্য, শুধুমাত্র হিস্টেরোসালপিনগোগ্রাফির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে আই.ভি.এফ-এর পরামর্শ দেয়াটা আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনোই সমর্থন করি না।
ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ হলে করনীয়
আবার, হিস্টেরোসালপিনগোগ্রাফির রিপোর্টে যদি ফ্যালোপিয়ান টিউব বন্ধ পাওয়া যায়, তাহলে পরবর্তী ধাপের চিকিৎসাই হচ্ছে ল্যাপারস্কোপি। এমনও হয় যে, হিস্টেরোসালপিনগোগ্রাফিতে যে টিউবকে বন্ধ বলা হয়েছে, ল্যাপারস্কোপি করতে গিয়ে দেখা যায় যে, তা খোলা। আবার, বন্ধ টিউব ল্যাপারস্কোপির মাধ্যমে খোলাও সম্ভবপর হয়। প্রকৃতপক্ষে, ল্যাপারস্কোপি একটি অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি। এর মাধ্যমে রোগীর দু’টি টিউবেরই প্রকৃত অবস্থা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়। এছাড়াও, এর মাধ্যমে আরো এমন কিছু তথ্য জানা যায়, যা হিস্টেরোসালপিনগোগ্রাফির মাধ্যমে কখনোই জানা সম্ভব নয়। যেমন, ডিম্বাণু ফোটার পর এই ডিম্বাণুটিকে ফ্যালোপিয়ান টিউব পিক-আপ করতে পারবে কী না, অর্থাৎ, একে টিউবের ভেতরে ঢোকাতে পারবে কী না, তা শুধুমাত্র ল্যাপারস্কোপির মাধ্যমেই জানা সম্ভব, হিস্টেরোসালপিনগোগ্রাফির মাধ্যমে কখনোই নয়।
ল্যাপারস্কোপির অসুবিধা
ল্যাপারস্কোপির অসুবিধা মূলত দু’টি। প্রথমত, এই পদ্ধতিতে রোগীকে পুরোপুরি অজ্ঞান করতে হয়। দ্বিতীয়ত, এটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। কিন্তু, এই অসুবিধাগুলো সত্ত্বেও ল্যাপারস্কোপি অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদ্ধতি। তাই, আমার রোগীদের মধ্যে যাদের বয়স খুব অল্প, অথবা খুব বেশি, এবং যারা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল, শুধুমাত্র তাদেরকেই আমি হিস্টেরোসালপিনগোগ্রাফির পরামর্শ দেই। অন্যথায়, টিউবের অবস্থা জানা বা ব্যাখ্যাতীত বন্ধ্যাত্বের কারণ নির্ণয়ে নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে ল্যাপারস্কোপি।